আয়াছুল আলম সিফাত :
দেশের সর্ব দক্ষিণে একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে দ্বীপটি। তবে এখন ভ্রমণে গিয়ে সেখানকার নলকূপের পানি পান করার পর অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে পর্যটকরা।
দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ খালেদ বলেন, দ্বীপের তিন অঞ্চল ডেইলপাড়া, কোনাপাড়া ও ছেড়াদিয়ায় মূলত সুপেয় পানি পাওয়া যেত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এই অঞ্চলগুলোর টিউবওয়েল দিয়ে লবণাক্ত পানি বের হচ্ছে। এছাড়া আগে কূপে পানির পরিমাণও বেশি ছিল। এখন মোটর ছেড়েও ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কয়েক মাস নিজের দায়িত্বে প্রায় ১০০ পরিবারকে সুপেয় পানি বিতরণ করেছি। এখন অবস্থা খুব খারাপ।
সেন্টমার্ঠিন দ্বীপের ভ্রমণের যাওয়া মো: ইব্রাহীম নামে এক পর্যটক জানান, সেন্টমার্ঠিন দ্বীপে আসার পর থেকে খাবার পানি গুলো খেয়ে তৃষ্ণা মেঠে না আরো কেমন জানি অনুভব হচ্ছিল। রাতে বেলা হুট করে পেটব্যথা শুরু হয়ে যায়। পরে এখানে স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার থেকে চিকিৎসা নিয়ে কোন রকম ভালো লাগতেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব বলেন, আমাদের দ্বীপে কোন দিন পানির এমন অবস্থা হয়নি। বেশ কিছু দিন ধরে কিছু স্থানের নলকূপের পানি দিন দিন লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে।
আর কিছু এলাকায় নলকূপের পানি লবণাক্ত হলেও সেই পানি পান করলেই তারা পেটব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।
সেন্টমার্টিনের হাসপাতালে চিকিৎসক ডা. নাইমুর রহমান বলেন ইদানিং সময় হাসপাতালে প্রতিমাসে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন পেটের পীড়া রোগ আসে। কেন এমন রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে স্পষ্ট কারণ জানা যায় নি। এই বিষয় সিনিয়রদের সাথে কথা বলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর কাসেম বলেন,২০১৮ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পানির গুণগত মান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ভয়াবহ তথ্য পায় আমরা। দ্বীপের পানিতে ইকোলা-ই নামে এক ধরণের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেড়েছে । যা পান করার পর অসুস্থ হয়ে যায় মানুষ। সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষের উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার আধিপত্যও বেড়ে যায়। পর্যটন মৌসুমে ৬৩ শতাংশ এবং মৌসুম ছাড়া অন্য সময়গুলোতে পাওয়া যায় ৩৭ শতাংশ ইকোলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ভূগর্ভস্থের পানি ছাড়াও সমুদ্রের পানিতেও ইকোলা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে। মলত্যাগের মাধ্যমে সেটি চলে আসে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে করতে না পারলে সেটি পরিবেশ ও পানির সাথে মিশে যায়। ইকোলার আক্রমণের ফলে ডায়েরিয়া, মূত্রনালীতে সংক্রমণ, রক্তে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়৷
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, সেন্টমার্টিনে মাত্র ৮ থেকে ১৫ ফুট নিচে মাত্র ৩ টি সুপেয় পানির জলাধার রয়েছে। সেখান থেকেই নলকূপের মাধ্যমে খাবার পানি তুলে দ্বীপবাসী।
এখন সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৬ থেকে ৮ ফুট গর্ত করে অনিরাপদভাবে মল সংরক্ষণ করা হয়। বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে জলাধার গুলো পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য আশপাশের মলসহ বিভিন্ন বর্জ্য টেনে নেয়। সেখান থেকে ইকোলা-ই ব্যাকটেরিয়া নলকূপের পানির মাধ্যমে উঠে মানুষের শরীরে মিশে যাচ্ছে।
এই দ্বীপে শুধু ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া নয়, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেছে লবণাক্ততা।
গত বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর পর লবণাক্ততার পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে। ফলে খাবার পানি সংকট নিরসনে সমুদ্রের পানি পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।