সানজীদুল আলম সজীব:
টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের জেরে ঢাকা থেকে আটক করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে একাধিক মামলা দেয় ওসি প্রদীপ।
এছাড়া মৃত্যু আগে ওসি প্রদীপ কর্তৃক নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার সাথে দেখা করার প্লান ছিলো নিহত সিনহার৷
এসব বিষয়েই বৃহস্পতিবার সিনহা হত্যা মামলায় চতুর্থ দফায় ২য় দিনে এজলাসে সাক্ষ্য দেন ভিকটিম স্বাক্ষী সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান।
৪র্থ দফা সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এজলাস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম জানান, আগামী ১০, ১১, ১২ অক্টোবর পঞ্চম দফা সাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।
আলোচিত এ মামলায় এপর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, অভিযোগ পত্র অনুযায়ী সাক্ষি রয়েছে ৮৩ জন।
গেল বছর ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। নিহতের পাঁচ দিন পর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে পুলিশ পরির্দশক লিয়াকত আলী, ওসি প্রদীপ সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এই মামলায় মোট ১৫ জন আসামী কারাগারে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।