ইফতিয়াজ নুর নিশান (উখিয়া) কক্সবাজার :
জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা, ডিসি সাহেবের বলী খেলা সহ বিভিন্ন বলী খেলায় অসংখ্যবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা কক্সবাজারের উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলী। যার বাবা উখিয়ার ফলিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত আবুল বলীও ছিলেন চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের এক সময়ের জনপ্রিয় বলী।
চার বছর প্রবাস জীবনে কাটিয়ে দেশে ফিরলেও করোনার কারণে বলী খেলার আয়োজন না থাকায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে মাঠে নামেননি একসময়ের তুখোড় এই কুস্তিগির।
অবশেষে, দীর্ঘ ৩ বছর পর কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ডিসি সাহেবের বলী খেলার ৬৭ তম আসরে যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি । এই আসরে নুর মোহাম্মদ বলীর সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের লিটন বিশ্বাস।
শনিবার (৭ মে) কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনাল খেলায় প্রায় ১৮ মিনিট লড়াইয়ের পর কারো জয় নিশ্চিত না হওয়ায় বিচারকরা যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন তাদের।
এর আগে, সেমিফাইনালে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জব্বারের বলী খেলায় শিরোপা জেতা চকরিয়ার জীবন বলী’কে হারান নুর মোহাম্মদ বলী।
ফাইনাল খেলা শেষে নিজেকে একক চ্যাম্পিয়ন দাবি করেছেন নুর মোহাম্মদ। তার দাবি তিনি জীবন বলী সহ পরপর তিনজন বলী’কে হারিয়েছেন, তাকে একক বিজয়ী না করে ঢাকা থেকে আসা অন্য একজন বলীর সাথে খেলানো হয়েছে।
নুর মোহাম্মদ বলেন, ” আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। আমি পরপর তিনজনকে হারিয়েছি। একজন বলী কতক্ষণ একটানা লড়াই করতে পারে? আমার সাথে ফাইনালে যিনি খেলেছেন তাকে আগে কখনো দেখিনি। আমি তাকেও হারাতাম কিন্তু সে আমাকে নিয়মভঙ্গ করে আহত করেছে।”
জব্বারের বলী খেলার সর্বশেষ ১১৩ তম আসরে অংশ নিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে নুর মোহাম্মদ বলী জানান, ” আমি মুসলমানের সন্তান, অই খেলার সময় রমজান ছিলো। আমার রোজা রাখতে হয়েছে তাই যায়নি, তবে আজ সেখানকার চ্যাম্পিয়ন জীবন বলীকে হারাতে পেরে ভালো লাগছে।”
যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আরেক বলী লিটন বিশ্বাস বলেন, ” সে যতোটা ম্যাচ খেলেছে, আমিও ততটা ম্যাচ খেলে ফাইনালে এসেছি। ফাইনালে সে আমাকে আঘাত করেছে বারবার, তাকেও হারিয়ে দেওয়ার আত্নবিশ্বাস ছিলো। কিন্তু সময়ের কারণে পারিনি।”
খেলা নিয়ে দুজন পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করলেও পুরস্কারের হিসেবে একটি ট্রফি নিয়েছেন এক সাথে।
আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, রীতি অনুযায়ী পরে আরেকটা ট্রফি বানিয়ে দেওয়া হবে আজ যিনি নিবেন না তাকে।
এবারের আয়োজনে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের দুই নারী বলী। নারী ইভেন্টে বাংলাদেশ পুলিশের ফাতেমা বেগমকে পরাস্ত করে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে নেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রীতি রায়।
খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে নগদ অর্থ ও ট্রফি তুলে দেন আয়োজনটির পৃষ্ঠপোষক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
এর আগে সমাপনী দিনের খেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, “জনপ্রিয় এই খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বলী খেলাকে ধরে রাখতে গ্রহণ করা হবে নানা উদ্যোগ।”
দুইদিন ব্যাপী আয়োজিত ঐতিহাসিক এই আয়োজনের সমাপনী দিনে দুপুর থেকে ঢোল ও নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্টেডিয়ামে আসতে থাকেন হাজারো মানুষ। বিকাল গড়ানোর সাথে সাথে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় দর্শক গ্যালারী। এবারের বলীখেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ বলী অংশ নিয়েছেন।