কাব্য সৌরভ, মহেশখালী :
বিয়ে না করেও এক প্রবাসীকে পিতা উল্লেখ করে মারুফা জান্নাত কিয়া মনি নামের ৩ বছর বয়সী এক কন্যা শিশুর জন্ম নিবন্ধন করে দিলেন মহেশখালী শাপলাপুরের ৭ নং ওয়ার্ডের এমইউপি ফরিদুল আলম।
জন্ম নিবন্ধনে ওই শিশুর মাতার নাম পারভীন আক্তার, কিন্তু পিতা উল্লেখ করা প্রবাসী মোঃ মাশুক ২০১৫ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। গত সাত বছরে কখনো তিনি বাংলাদেশে আসেননি, তাহলে কিভাবে এই তিন বছর বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধনে পিতার নাম মোঃ মাশুক উল্লেখ করা হয়েছে সে বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় প্রবাসী মাশুকের সাথে।
তিনি জানান, ২০১৫ সালে শাপলাপুরের মুকবেকী বুধার পাড়া এলাকার খোরশেদ আলমের মেয়ে পারভীন আক্তারের (২৪) সাথে মোবাইলে পরিচয় হয় তার সাথে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে পারিবারিক নানা সমস্যা দেখিয়ে পারভীন আক্তার প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ তার। পারভীনের সাথে বিয়ে হয়েছে কিনা এবং মারুফা জান্নাত কিয়া মনি তার সন্তান কিনা জানতে চাইলে প্রবাসী জানান, বিয়ে করার প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং নিজের নামে (পারভীন) জায়গা কেনার পর প্রতারণা করে নিঃস্ব করেছে তাকে। বিগত সাত বছর তিনি প্রবাসে, তাহলে ৩ বছর বয়সী মারুফা জান্নাত নামের পারভীন আক্তারের ওই শিশু কি করে তার সন্তান হয় এই বলে উল্টো প্রশ্ন ছুটে দেন এই প্রবাসী।
এই বিষয়ে জানতে পারভীন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রবাসী মোঃ মাশুকের কাছ থেকে ৩২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে মাশুক নামের কাউকে চেনেন না বলে জানান। পরে মাশুকের দেয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মাশুকের সাথে তার বিয়ে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। তার সাথে মোবাইলে প্রেম ছিলো বলে জানান পারভীন।
বিয়ে না হলে পারভীনের মেয়ে মারুফা জান্নাত কিয়া মনির জন্ম নিবন্ধনে পিতা কিভাবে মোঃ মাশুক উল্লেখ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
এই জন্ম নিবন্ধন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলমের মাধ্যমে করেছেন বলে জানান তিনি। জন্ম নিবন্ধনে যাচাইকারীর হিসেবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলমের সীল ও স্বাক্ষর রয়েছে। মুঠোফোনে কথা হয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলমের সাথে।
তিনি জানান, পারভীন ও প্রবাসী মোঃ মাশুকের মধ্যে বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানতেন, সেই সুবাদে এই জন্ম নিবন্ধন তিনি যাচাই করেছেন। পারভীন ও মাশুকের বিয়ের কোনো লিখিত প্রমাণ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই জনপ্রতিনিধি তাদের বিয়ের কোনো প্রমাণ নেই বলে জানান। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই জন্ম নিবন্ধনে মাশুক নামের ওই প্রবাসীকে পিতা উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এই বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানানো হয় মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়াছিন সরকারি প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইতিমধ্যে বিয়ে না হওয়া সত্ত্বেও প্রবাসীকে স্বামী উল্লেখ করে পারভীন তার মেয়ের ভূয়া জন্ম নিবন্ধন করা নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।