নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের আলোচিত নারী রোজিনা আকতার ওরফে ইয়াবা কুইন রোজিনার বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
তার বিরুদ্ধে ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনসহ জ্ঞাত-আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ২৭৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দায়ের করা মামলায় রোজিনা আকতারকে (৩০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এটি কক্সবাজারে কার্যালয়ে দুদকের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় মামলা।
রোজিনা কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়ারছড়ার (২নং ওয়ার্ড) বাসিন্দা ও বর্তমানে ১নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়ায় বাস করা রিয়াজ আহমদ ইলিয়াসের স্ত্রী।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, রোজিনা আকতারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদক, প্রধান কার্যালয়ের স্মারক মূলে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ আসে। পরে তার নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়।
২০২১ সালের ১ জুন আদেশ গ্রহণ করে একই বছরের ৯ জুন তার সম্পদ বিবরণী দুদক, সজেকা, চট্টগ্রাম-২ এ দাখিল করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য দুদক প্রধান কার্যালয়ের কক্সবাজারভুক্ত করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে দেখা যায়, রোজিনা আকতার তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজায় ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিলের দলিল নং-১৯৩৫, মূলে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ জমি ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন মর্মে ঘোষণা দেন। তার দাখিলকৃত দলিল পর্যালোচনায় জমির মূল্য ৪৭ লাখ ৬ হাজার ৮শ টাকা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি ২৭ হাজার ৮৬ হাজার ৮শ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।
এছাড়াও তিনি তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে স্বর্ণ, আসবাবপত্র, ব্যবসার মূলধন হিসেবে ৬ লাখ ২৭ হাজার ৫শ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে তার নামে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। আরও কয়েকটি ক্ষেত্র মিলিয়ে তিনি দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার বিষয়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, রোজিনা আকতার ২০০৯ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত তার পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। এ সময় ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ২৭৭ টাকা। আয়ের বিপরীতে তার প্রতিষ্ঠান নুরী ফ্যাশন টেইলার্স হতে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা, নিউ সোনালিয়া শুঁটকি বিতান হতে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, শারমি রিসোর্ট কটেজ হতে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা, সাঈদ এন্টারপ্রাইজ হতে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং নুরী কালেকশন এক লাখ ২০ হাজার টাকা মিলিয়ে ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া যায়। সে হিসেবে তার আয়ের উৎসের অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ২৭৭ টাকার সম্পদ ভোগ দখলে রেখে শান্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কক্সবাজারের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) নাছরুল্লাহ হোসাইন বলেন, অপরাধ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক সজেকা চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক আবদুল মালেকের তদন্ত প্রতিবেদন মূলে রোজিনা আকতারের বিরুদ্ধে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলা তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, রোজিনা আকতার কক্সবাজার জেলাব্যাপী ‘ইয়াবা কুইন’ নামে পরিচিত। তার সঙ্গে প্রশাসনের নানা স্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিতর্কিত অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তার বাসায় পুলিশের তিন সদস্যের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় ওই তিন পুলিশকে গ্রেফতার ও বরখাস্ত এবং রোজিনাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোজিনা আকতারের স্বামী রিয়াজ উদ্দিন ইলিয়াস বলেন, বিষয়টি আমি এখনো জানি না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম দুদক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলা হওয়ার মতো এত সম্পদ আমার নেই।
তাকে কেন ইয়াবা কুইন বলা হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাজু আকতার নামে এক ইয়ারা কারবারি বিভিন্ন স্থানে আমার নামে এসব রটিয়ে বেড়িয়েছে।