বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সবার আগে

মিয়ানমারের চোরাই গরু রামু বাজারে

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার)

কক্সবাজার জেলার রামুর পূর্ব প্রান্তের দুই ইউনিয়ন গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া। যেতে হয় বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পার হয়ে। ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগে মিয়ানমারের চোরাই গরুতে সয়লাব হয়ে গেছে এই এলাকার বাজারগুলো। নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসে এসব গরু।

প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি চোরাই গরু স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে আসে। মিয়ানমার থেকে আসা এসব চোরাই গরু অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন সেদিকেই। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় খামারিরা।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আসা এসব চোরাই গরু বাংলাদেশে ঢুকলেই ‘বৈধ’ হয়ে যায়। গর্জনিয়া বাজার ও কক্সবাজার খরুলিয়া বাজারের ইজারাদারেরা গরু প্রতি দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় রসিদ দিয়ে দিচ্ছেন। পুলিশ মিয়ানমারের গরু জব্দ করে আদালতে পাঠালে এসব রসিদ দেখিয়ে চোরাকারবারিরা গরু ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানায় রামু থানা-পুলিশ। এমন একটি রসিদ টিটিএনের হাতে এসেছে।

এ ছাড়া গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও টাকা খেয়ে গর্জনিয়া বাজারে গরু বিক্রি করতে দেওয়া ও প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গর্জনিয়া বাজারের এক গরু ব্যবসায়ী টিটিএনকে বলেন, ‘এখানে রীতিমতো একটি ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে আসা এসব চোরাই গরু দেশে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন স্তরে টাকা দিয়ে বৈধ করতে হয়। গরুর সঙ্গে ইয়াবাও ঢুকছে অনায়াসে।’

গর্জনিয়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে মিয়ানমারের চোরাই গরু। ছবি: টিটিএন।

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও রামু থানা-পুলিশ মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা শতাধিক গরু মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ করে নিলামে বিক্রি করেছে। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন চোরাকারবারিকে।

গত ২৬ ডিসেম্বর গর্জনিয়া গরু বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শত শত গরু সীমান্ত পার হয়ে গর্জনিয়া বাজারে আসছে। গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বাজারের আশপাশেই পাহারায়। সেদিন মিয়ানমার থেকে আসা দুটি গরু মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ করে গর্জনিয়া ফাঁড়ি পুলিশ। পরে আদালতের আদেশে গরু দুটি নিলামে তোলা হয়।

ভিডিও: https://www.facebook.com/theterritorialnewsbd/videos/3322669991329912

তবে গর্জনিয়া বাজারের একাধিক গরু ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সাংবাদিকদের দেখানোর জন্যই মাত্র দুটি গরু জব্দ করেছে পুলিশ। গরু জব্দ করার সময় বাজারে ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ঘরের গোয়ালে মিয়ানমারের বেশ কিছু গরু থাকলেও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।

এ ব্যাপারে জানতে গর্জনিয়া গরু বাজারে হাসিল সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা হামিদুল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি টিটিএনকে বলেন, ‘বাজারে যে গরুই আসুক না কেন, আমরা ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ দিই। সরকার দেশি গরু এবং মিয়ানমারের গরু কোনটা, তা নির্ণয়ের কোনো নির্দেশনা দেয়নি।’

এই ইজারাদার মিয়ানমারের গরু চেনার উপায় নেই বললেও একাধিক সূত্র বলেছে, মিয়ানমারের গরুর গায়ে রং দিয়ে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন লেখা থাকে। এ ছাড়া সাদা ও লাল এই দুই রঙের মোটাতাজা গরুই মিয়ানমার থেকে দেশে ঢোকে। এখানকার স্থানীয়রা এসব গরু ভালোভাবেই চেনেন।

গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর রামুর মূল স্টেশন চৌমুহনীর ওপর দিয়েই নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে এনে খরুলিয়া বাজারে তোলা হয় দুই শতাধিক গরু। সেদিন তৎক্ষণাৎ এই প্রতিবেদক ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে রামু থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রকাশ্যে চোরাই গরু রামুর বাজারগুলোতে বিক্রি হলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—এমন প্রশ্নে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন টিটিএনকে সেলফোনে বলেন, ‘গত মাসে ১১টা গরু জব্দের বিষয়ে আপনাদের অনেক লোক তিন লাখ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তদবির করেছিলেন। তবে এসব গরু নিলামে দিয়েছি।’ গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর রামু চৌমুহনীর মূল স্টেশন দিয়ে দুই শতাধিক গরু প্রবেশ করেছিল। বিষয়টি জানানোর পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন—জানতে চাইলে ওসি বলেন, ওই সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন।

এদিকে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে প্রায় নির্বিঘ্নে গরু প্রবেশ করায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা। অনেকে খামার বন্ধের ঝুঁকিতে পড়েছেন।

মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা এসব গরু অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি হওয়ার কারণে স্থানীয় বলদ গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রামুর খামারি আবদুস সোবহান। তিনি বলেন, ‘যেভাবে মিয়ানমার থেকে গরু দেশে প্রতিদিন ঢুকছে আর গোখাদ্যের দাম বেড়েছে, আমরা খুব বেশি দিন খামার টিকিয়ে রাখতে পারব না।’

গরুর দামের বিষয়ে খরুলিয়া বাজারের গরু ব্যবসায়ী মো. এজাহার মিয়া বলেন, ‘দেশি বলদ গরু ক্রয়-বিক্রয়ের চেয়ে মিয়ানমারের গরুগুলোতে তিন গুণ লাভ হয়। ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় কিনলেও দেশে এনে তা অনায়াসেই ১ লাখ ২০ হাজারে বিক্রি করা যায়। তাই ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে আসা গরু ব্যবসার সঙ্গেই বেশি সম্পৃক্ত হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় মাংসের বাজারেও এই গরুর চাহিদা বেশি।’

সর্বশেষ খবর

এমবাপ্পেই ফ্রান্সের অধিনায়ক

টিটিএন ডেস্ক: গুঞ্জনই সত্যি হলো। ফ্রান্সের ইউরো বাছাইয়ে অধিনায়ক হলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। কোচ দিদিয়ের দেশম নতুন অধিনায়ক হিসেবে এই স্ট্রাইকারকে নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বকাপ শেষে উগো লরিস...

সৌদিতে রোজা শুরু বৃহস্পতিবার

ডেস্ক রিপোর্ট: সৌদি আরবে মঙ্গলবার হিজরি রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। সে হিসাবে দেশটিতে রমজান মাস শুরু হবে বৃহস্পতিবার। আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবের...

চকরিয়ায় ভেজাল ঘি’র কারখানা,আবাসিক হোটেলে অভিযান,জরিমানা ও সিলগালা

  সাইফুল ইসলাম সাইফ: কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে ভেজাল ঘি এর কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে ফাঁসিয়াখালীর রাজারবিলের একটি বাসায় এ অভিযান চালানো হয়। গোপন...

২৬ মার্চ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সায়ন্তন ভট্টাচার্য্য: যতদূরে যাও পাখি,দেখা হবে ফের- স্বাধীন ঐ আকাশটা শেখ মুজিবের'- প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হলো জেলা প্রশাসন,কক্সবাজারের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩ উদযাপন...