কাব্য সৌরভ, মহেশখালী :
মহেশখালীতে বনভূমির সরকারি প্যারাবন সাবাড় করে নির্মাণ করা হয়েছে চিংড়িঘেরের বাঁধ। উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজি পাড়ার বগাচতর ঘোনা এলাকায় প্যারাবনের দুই হাজার অধিক বাইন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এই বাঁধ নির্মাণে।
সেখানে ইতিমধ্যে অন্তত ২০০ একর বনভূমি দখল করে চিংড়িঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণ করেছে ভূমিদস্যুরা।
স্থানীয়রা জানায়, প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্যুরা গত সপ্তাহ তিনেক ধরে বগাচতর ঘোনার প্যারাবনে শতাধিক শ্রমিক দিয়ে দিনদুপুরে প্যারাবনের অসংখ্য গাছ কাটার পর খননযন্ত্র (স্কেভেটর) দিয়ে চিংড়িঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণ করছে।
মহেশখালী রেঞ্জ অফিস জানায়, হোয়ানক কালাগাজির পাড়া বগাচতর ঘোনা প্যারাবনের ওই এলাকা বনবিভাগের মহেশখালী গোরকঘাটা রেঞ্জের ঝাপুয়া বিটের অধীন। প্যারাবনের গাছ কেটে ভূমি দখল করার বিষয়টি জানার পরই স্থানীয় বনকর্মীরা বাঁধা দেন। পরে গাছ কাটা ও বাঁধ নির্মাণের নিয়োজিত শ্রমিকরা পালিয়ে যান। এরপর থেকে দফায় দফায় সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান বন বিভাগের মহেশখালী গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা এস.এম আনিসুল হক।
এস.এম আনিসুল হক আরো জানান, মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে একটি চক্র কয়েক দিন ধরে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়িঘেরের বাঁধ নির্মাণ করেছে। এই বাঁধ নির্মাণে প্যারাবনের ছোট-বড় মিলে অন্তত দুই হাজার বাইনগাছ কাটা পড়েছে। এতে বন বিভাগের প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্যারাবনের ওই জায়গার পাশে এরশাদ নামের ওই ব্যক্তির একটি মাছের প্রজেক্ট রয়েছে সে সূত্রে তিনি সেখানে শ্রমিক রেখে প্যারাবনের গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণ করে দখলের পায়তারা করছে।

বনকর্মীরা গত মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার দুই দফা অভিযানের পর আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি) তৃতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত চিংড়িঘেরের বাঁধ কেটে দিয়েছে। প্যারাবনের গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে গত ১০ তারিখ, ১২ তারিখ। এবং আজও একটি সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হবে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, মহেশখালী একটি দ্বীপ এলাকা। প্যারাবন নিধন হলে পরিবেশের যা ক্ষতি হবে তা অপূরণীয়। এই রিপোর্ট লেখার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এ নিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি জানিয়ে তিনি আরো জানান এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, প্যারাবন দখলের এই ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটে এরশাদের সাথে রয়েছে হোয়ানকের নাজেম উদ্দিন নাজু এবং বড় মহেশখালীর মারুফ ও আব্দুল মোতালেব। এই বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের লাস্ট ৮৪৭৪ ডিজিট নং এ কল দিলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপর দিকে মহেশখালীর পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, বনবিভাগের অভিযানের বিষয়টি নাটকীয়তা। দীর্ঘ মাসখানেক ধরে প্যারাবনের হাজার হাজার বাইন গাছ নিধন করে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হাজার দুয়েক গাছ কাটার পর তারা অভিযানের নামে নাটকীয়তা করেছে। সময় মতো অভিযানের উদ্যোগ না নেয়ায় সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহেশখালী উপকূল। তাদের দ্রুত বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।