হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী:
শুরু হয়েছে দুনিয়ার সবচে বড় খেলার আসর ফিফা বিশ্বকাপ। এর মতো জনপ্রিয় আসর দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু আমাদের দেশ ও সমাজের দিকে তাকালে এবং উন্মাদনা খেয়াল করলে বোঝা দায় এটি কি বিশ্বকাপ না বিশ্বচাপ? আমাদের দেশের মানুষ আবেগী কিনা জানি না তবে হুজুগে।
এই যে পুরো দেশ বিশ্বকাপ নিয়ে পুলকিত এবং জেগে ওঠেছে, আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি, আমাদের ভাই বা সন্তানদের খেলার জন্য ভালো কোনো মাঠ নেই। শহরের বাসিন্দারা তাদের সন্তানদের কোথায় খেলতে পাঠাবেন? কোথাও নেই অক্সিজেন নেওয়ার মতো ফাঁকা মাঠ বা জায়গা। গ্রামে খেলার মাঠ থাকলেও নেই খেলোয়াড় তৈরীর কোন প্রচেষ্টা। এরকম সমাজে এ ধরনের উন্মাদনা কতটা যৌক্তিক? তাছাড়া খেলাকে খেলার জায়গায় কি রাখতে পারি আমরা? এই বিশ্বকাপ নিয়ে কত যে অঘটন ঘটবে তা জানা নেই। সবচেয়ে সাংঘাতিক বিষয় প্রাণ হারানো। ফেভারিট দেশের পতাকা টাঙ্গাতে গিয়ে কক্সবাজারে খালী হলো এক মায়ের বুক।
এতো বেশী মানুষ উন্মাদনায় ঝুঁকেছে তাদের বোঝানো অসম্ভব। পথ একটাই। মিডিয়া যেন সংযত থাকে। সকলকে যেন নিয়ন্ত্রিত আবেগের বিষয়টা বুঝিয়ে দেওয়া যায়। পতাকা বানানো ঠিক আছে কিন্তু গাঁটের টাকা খরচ করে যারা ভিন দেশের পতাকা উড়িয়ে গর্ব করেন, তাদের কজনের বাড়িতে স্বদেশের পতাকা আছে? কজন জাতীয় দিবসে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান?
খেলার নিয়ম অনুযায়ী একদল জিতবে, একদল হারবে। হারলেও মেসি, রোনালদো বা নেইমার সুপারস্টার। তাদের ক্যারিয়ার এবং তাদের জায়গা নিশ্চিত। এখনই যারা অশ্লীল ভাষায় তাদের আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন ট্রফি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ট্রল করছেন তাদের সংযত হবার বিকল্প নেই। ফুটবলের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ফিফা সভাপতির কাছে এখন খেলার চেয়েও বড় রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধ সামলানো। ওই কারণে তিনি খেলার দিনগুলোতে যুদ্ধ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। আশা করি তেমনটিই হবে এবং ওই বিরতির পর আর যুদ্ধমুখী হবে না তারা। মাঠের লড়াইকে মাঠেই রেখে নিজেদের সমর্থন বা অসমর্থন বজায় রাখার নাম আধুনিকতা। বিশ্বকাপ যেন বিশ্বচাপে পরিণত হয়ে না পড়ে, সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে সেদিকে।