কাব্য সৌরভ, মহেশখালী-
মহেশখালীতে গৃহহীন হতদরিদ্রদের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিববর্ষের ঘরের ফ্লোর করা হচ্ছে বাঁশের অংশ দিয়ে। এখনো ঘর গুলো পুরো নির্মিত হয়নি এরই মধ্যে কিছু ঘরের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। মহেশখালীর কালারমারছড়ায় সরজমিনে গিয়ে দেখা দেখা যায় এমন দৃশ্য।
মুজিববর্ষের ঘর তৈরির পেছনে সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের তথ্যও পাওয়া যায়। কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সোনার পাড়া, ৭নং ওয়ার্ডের ছামিরাঘোনা ও অফিস পাড়ায় নির্মাণাধীন মুজিববর্ষের এসব ঘর তৈরিতে উপকারভোগীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী আদায় করার মতো নানান অনিয়মের অভিযোগও ওঠে আসে উপকারভোগীদের মুখ থেকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে ইউএনও’র নিয়োজিত লোকজন ও মিস্ত্রিরা কাজে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় ভীতি দেখিয়ে উপকারভোগীদের নিকট থেকে অনেকটাই জোরপূর্বক অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী আদায় করে নিয়েছে। অনেক উপকারভোগীকে নিজের অর্থে কিনতে হয়েছে সিমেন্ট। অনেক সময় ঘর তৈরির মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করার জন্য নিজ অর্থে দিতে হয়েছে দৈনিক মজুরি খরচ।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন উপকারভোগী বলেন, ইউএনও’র নিয়োজিত ব্যক্তি ও মিস্ত্রি বলেছে এইসব ঘরের নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ বস্তা সিমেন্ট দেয়া হয়েছে। এইসব সিমেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজ থেকে সিমেন্ট কিনে দিয়ে বাকি কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তাই নিজেরা মজুরি করে সংসার চালালেও এইসব সিমেন্টের টাকা জোগাড় করে সিমেন্ট কিনে দেয়ার কথা জানান ওই ব্যক্তি। এসময় নিজ অর্থে সিমেন্ট কিনে দেয়ার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি কয়েকটা সিমেন্ট দোকানির সিমেন্ট ক্রয়ের বিল দেখান। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া অব্দি পর্যন্ত এভাবে সিমেন্ট জোগান দিতে হয়েছে বলে জানান তারা।
এই বিষয়ে কথা হয় মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োজিত তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় শামসুল আলম রনির সাথে। তিনি জানান, ইউএনও’র অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি তিনি তদারকি করছেন। অর্থ আদায় কিংবা মালামালের খরচ বাবৎ অর্থ নেয়ার কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াছিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকার নিজ তহবিল থেকে পূর্ণ অর্থ ব্যয় করে এইসব ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। মুজিববর্ষের এইসব ঘর সারাদেশে সরাসরি ইউএনওদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে। এ কাজে কোন ঠিকাদার নিযুক্ত হয়নি। বরাদ্দের চেয়েও অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন অতিরিক্ত যে খরচ লাগছে তা এমপি মহোদয়, স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খরচ মিটানো হচ্ছে। তবে কেউ যদি উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
এইসব ঘরের ফ্লোরে বাঁশের অংশ ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফ্লোরে রড ব্যবহার করার বিষয়ে ধরা নেই। উপকারভোগীরা নিজ থেকে এটা করতে পারেন বলে জানান তিনি। তবে স্থানীয় ইউএনও’র ঠিকাদারিতে নির্মিত এইসব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত উপকারভোগীরা নির্মাণে নিজেদের নির্মাণ সামগ্রী সংযুক্ত করার নিয়ম নেই। সারাদেশে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম নিয়ে সচেষ্টতার অবস্থান থেকে এই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এইসব ঘর তৈরিতে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবী এইসব ঘর তৈরীতে প্রায় তিনলক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হচ্ছে।