টিটিএন ডেস্ক :
দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের নির্মাণকাজের সমাপ্তি উদযাপনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে চট্টগ্রামকে নতুনভাবে গড়ে তুলে। কর্নফুলী নদী গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। ওয়ান সিটি টু টাউন, এভাবেই গড়ে উঠবে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। চট্টগ্রামে যোগাযোগটা আরও জোরদার হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এর ফলে এই এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য তিনি চীন সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি। একই সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতার জন্য নৌ বাহিনী ও স্থানীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের যে উৎসাহ উদ্দীপনা…তারা নিজেদের বাপদাদার জমি ছাড়তেও রাজি। তারা না চাইলে এই প্রকল্প করতে পারতাম না। তাদের কাছ থেকে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মাত্র কয়েকদিন আগে একশ ব্রিজ উদ্বোধন করার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এটা একটা ইতিহাস। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। এর ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নয়ন হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যেমনটি জাতির পিতা চেয়েছিলেন সেই পথেই আমরা যাত্রা শুরু করেছি। এদেশের দারিদ্র্যতা থাকবে না।
করোনায় সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা এখনো ভালো আছি।
এ সময় দেশবাসী যার যার জায়গা থেকে যা কিছু সম্ভব উৎপাদন করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, খাদ্যে যাতে মানুষ কষ্ট না পায় কৃষিকে প্রধান্য দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
এ সময় সমালোচকদের জবাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা উন্নয়ন চোখে দেখে না, তাদেরকে চোখের ডাক্তার দেখানো উচিত। আর কেউ যদি চোখ থাকতে অন্ধ হয় তাহলে বলার কিছু নেই। যারা নিজেরাও কিছু করতে পারে না কেউ করলে সেটিও দেখে না। তারা মানুষের কল্যাণে কখনো কাজ করে করবেও না।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি জাতি। আমরা বিশ্বের কাছে হাত পেতে, ভিক্ষা চেয়ে চলব কেন? বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ থেকে টানেল বিদেশে দেখেছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম একসময় অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক কাজ করেছি। টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদযাপন উপলক্ষে টানেল এলাকায় সকাল থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। আশপাশের অনেক এলাকা থেকে তারা অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে অবস্থান নেন। যদিও আমন্ত্রিতদের ছাড়া কাউকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শুরুর আধঘণ্টা আগে থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা আসা শুরু করেন। দুই হাজার অতিথির উপস্থিতিতে বিপুল করতালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এসময় পতেঙ্গা প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী নওফেল, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিন মিং, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।